ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দিকে নবীনগরসহ আশে-পাশে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় শুধুমাত্র সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ হত। অনগ্রসর গণমানুষের কথা চিন্তা করে তৎকালীন জমিদার আমলে অনেক প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে মুরাদনগর থানার ভূবনঘর গ্রামের মৌলভী আবদুস সোবহান ওরুফে আবদু মিয়া 1896 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন নবীনগর হাই ইংলিশ স্কুল। সময়ের পরিক্রমায় নবীনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নবীনগর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, নবীনগর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
মৌলভী আবদুস সোবহান ওরুফে আবদু মিয়া পেশায় ছিলেন একজন প্রতিথযশা আইনজীবী। তিনি 1885 সল থেকে নবীনগর মুন্সেফ আদালতে আইন পেশায় যোগদান করেন। প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী হিসেবে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। অসহায় হতদরিদ্রদের মোকাদ্দমা তিনি বিনা পয়সার পরিচালনা করতেন। নবীনগরের স্থায়ী বাসিন্দা না হয়েও এ এলাকায় স্কুল-মসজিদ- হাসপাতাল নির্মাণ করে গেছেন দানবীর-ধর্মভীরু অহংকারহীন এই মানুষটি।
প্রতিষ্ঠলগ্নে বিদ্যালয়টি ছিল খড়ের ঘর। তিনি আমৃত্যু স্বপ্ন দেখে গেছেন এই বিদ্যালয়টিকে নিয়ে। তাঁর স্বপ্নকে সফল করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হন অনেকবার। এমনকি জীবনের ঝুকিও নিয়েছেন। 1902 সালের 23 ফেব্রুয়ারীর গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে বিদ্যালয়ের কয়েকটি কক্ষ পুড়ে যায়। আবদু মিয়া সাহেব জীবনের মায়া তুচ্ছ করে সেই রাতে ভয়াবহ আগুনকে তোয়াক্কা না করে একটি শ্রেণিকক্ষসহ স্কুলের অনেক মূল্যবান রেকর্ডপত্র রক্ষা করেন। এই অগ্নিকান্ডের পর একটি একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করেছিলেন।
তৎকালীন সময়ে মোসলমান শিক্ষকদের প্রচন্ড অভাব থাকায় তিনি বিনা বেতনে ফার্সি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর উপার্জিত অর্থের সিংহভাগই খরচ করতেন জনহিতকর কাজে।
তাঁর পরিবারের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছে সাবেক বিচারপতি এ.কে.এম সাদেক, শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিধ সাহিত্যিক কবীর চৌধুরী, বিখ্যাত টি ভি ও মঞ্চ অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, মুরাদনগর এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য জনাব ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এফ.সি.এ । এছাড়াও বহু গুণগ্রাহী দেশ বরেণ্য ব্যক্তি এ পরিবারে জন্মগ্রহন করেছেন।
আবদু মিয়া সাহেবের ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ে ছিলেন।
ছেলেরা হচ্ছেনঃ
১।আবদুল হামিদ, সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার।
২।আবু মোছা আহমেদ মোস্তফা, সাবেক সরকারি উকিল।
৩।আবু মোছা মোঃ মাসিহা, সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর, শিল্প মন্ত্রনালয়।
৪।আবু দাউদ মাহমুদ, কোলকাতায় অধ্যয়নকালীন সময়ে মারা যান।
মেয়েরা হচ্ছেনঃ
১।সৈয়দা খাতুন, স্বামী -মীর রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সাবরেজিস্টার।
২।মাসুমা খাতুন,স্বামী- আবদুল হালিম চৌধুরী, সাবেক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
৩।আছিয়া বেগম,স্বামী মোঃ আবদুল্লাহ, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।
৪।ফাহিমা বেগম, স্বামী-আবদুল আজিজ,সাবেক সহকারী কমিশনার আয়কর বিভাগ।
৫।উম্মে কবীর আফিয়া বেগম, স্বামী আবদুল হালিম, সাবেক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
এই মহান শিক্ষানুরাগী মানুষটি 1344 বঙ্গাব্দের ০৮ মাঘ তাঁর ভূবনঘরের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁরই নির্মিত মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয় তাঁকে। মৃত্যুর পূর্বে তাঁর সম্পত্তির আয়ের একটি বড় অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করার নির্দেশনা দিয়ে যান। নির্দেশনা মতে এখনও তাঁর পরিবারে লোকজন প্রতিবছর জনসেবা মূলক কাজ করে থাকেন।
পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তালাহ সর্বোচ্চ সম্মানিত বেহেস্ত- জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন-এই আলোর দিশারী মহান মানুষটিকে।
আমিন।